‘হাম্পটি ডাম্পটি স্যাট অন আ ওয়াল, হাম্পটি ডাম্পটি হ্যাড আ...। ’ মুঠোফোনে আসা বার্তাটা এভাবেই শেষ হয়। আর তারপরই শোনা যায় পড়ে যাওয়ার শব্দ। ছাদের ওপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় একজনকে। এভাবে সত্যি সত্যিই ‘গ্রেট ফল’ দিয়ে শুরু হয় ‘লগআউট’ সিনেমাটি। আর এমন চমকে দেওয়া সূচনা দিয়ে শুরু থেকেই দর্শককে পর্দার সঙ্গে আটকে ফেলে সিনেমাটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইনফ্লুয়েন্সার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি এখন বহুলচর্চিত বিষয়। কিছুদিন আগেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খারাপ দিক নিয়ে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছিল ‘সিটিআরএল’ বা ‘কন্ট্রোল’ সিনেমাটি। মুক্তির পর যাঁরাই দেখেছেন, তাঁরাই ভাবতে বাধ্য হয়েছেন প্রযুক্তির খারাপ দিক নিয়ে। প্রযুক্তির কাঠপুতুল হয়েই যে আমরা দিন কাটাচ্ছি, এ সিনেমা ছিল তার প্রমাণ। এবার ‘লগআউট’ মুক্তির পর আবার নড়েচড়ে বসেছেন দর্শকেরা। এবার উন্মোচিত হলো আরেক পর্দা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের যাপন।
প্রত্যুষ দুয়া ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার। ‘প্যাটম্যান’ নামে সে জনপ্রিয়। সাড়ে ৯ মিলিয়নের বেশি অনুসারী রয়েছে তার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সে কাজ করে। তাই ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে সব সময় দর্শকের কাছে প্রাসঙ্গিক থাকাই তার একমাত্র লক্ষ্য। কীভাবে ভাইরাল কনটেন্ট বানানোর মাধ্যমে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে এটাই তার একমাত্র ধ্যান–ধারণা।
এদিকে, প্রত্যুষ দুয়ার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী একটি ভাইরাল ভিডিও আপলোড করে।
সঙ্গে সঙ্গে অনুসারীর সংখ্যার দিক থেকে তার কাছাকাছি চলে আসে। ১০ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি মানুষ যাকে আগে অনুসরণ করবে, তার কাছে চলে যাবে ব্র্যান্ডের চুক্তি। ‘কিছু একটা করা’র জন্য প্রত্যুষকে চাপ দিতে থাকে তার ম্যানেজার জেডি।
রাতে মদ্যপ অবস্থায় লাইভ ডিডিও করে প্রত্যুষ। সকালে উঠে সে যখন দেখতে যায় তার অনুসারী কত বাড়ল, তখন আর ফোন খুঁজে পায় না। সারা ঘর খোঁজার পর বুঝতে পারে যে সে ফোন হারিয়ে ফেলেছে। যে ফোন ছাড়া প্রত্যুষ একমুহূর্তও থাকতে পারে না, সেই ফোন হারিয়ে দিশাহারা হয়ে যায় সে।
প্রত্যুষ নিজের নম্বরে কল দিলে এক নারী ফোন ধরে। আর একটা পর্যায়ে অজান্তেই সেই নারীর কাছে নিজের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয় সে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারে যে কী ভয়ংকর ভুল সে করে ফেলেছে। একের পর এক মারাত্মক সব ঘটনা তাকে দাঁড় করিয়ে দেয় খাদের মুখে। প্রত্যুষ কি আর ফিরে আসতে পারে সেখান থেকে?
‘কালা পানি’, ‘মামলা লিগ্যাল হ্যায়’, ‘হিউমারাসলি ইয়োরস’ সিরিজ বানিয়ে অমিত গোলানি ইতিমধ্যে জনপ্রিয়। তাঁর প্রথম সিনেমা ‘লগআউট’। ১৮ এপ্রিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি-ফাইভে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। ‘লগআউট’-এর চিত্রনাট্যকার বিশ্বপতি সরকার।
‘লগআউট’ সিনেমায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখানো হয়েছে। এ সিনেমায় খুঁটিনাটি বিষয়গুলা এত সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে যে মনে হয়, আমি নিজেই প্রত্যুষ ওরফে প্যাটম্যানের জীবন যাপন করছি। আর এটি সম্ভব হয়েছে ‘প্রত্যুষ’ চরিত্রের বাবিল খানের অসাধারণ অভিনয়ের জোরে। একটা বদ্ধ ঘরে ক্লোজ শটে তিনি শুধু নিজের দুর্দান্ত অভিব্যক্তিতেই পুরো গল্পটা টেনে নিয়ে গেছেন। পার্শ্বচরিত্রে রসিকা দুগ্গল, গান্ধর্ব দেওয়ান, নামিশা নায়ের থাকলেও পর্দায় বলতে গেলে তাঁদের দেখানোই হয়নি। বাবিল খান তাঁর চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করলেও অন্যান্য চরিত্রের দিকেও আরেকটু মনোযোগ দেওয়াই যেত।
‘লগআউট’ সিনেমায় দেখা যায়, ইনফ্লুয়েন্সারদের যাপনের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া এতটাই মিশে গেছে যে তাঁরা চাইলেও স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারেন না। সবকিছুর আগে চিন্তা করতে হয়, অনুসারীরা সেটা কীভাবে নেবেন? গ্রহণযোগ্য থাকবে তো দর্শকের কাছে? আর এ জন্য মিথ্যাচার করতেও ছাড়েন না তাঁরা। দর্শকেরা যা দেখতে চাইবেন, সেভাবেই কনটেন্ট বানাতে হবে। নিজেকে সেভাবে তুলে ধরতে হবে ক্যামেরার সামনে। ইনফ্লুয়েন্সাররা ভাবেন, আসলে অনুসারীরা তাঁদের কাছে বন্দী। আসলেই কি তা–ই? নির্মাতা যেন ব্যাপারটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
ইন্টারনেটে বুঁদ প্রজন্ম যে নিজের প্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার থেকে কতখানি অনুপ্রাণিত, ‘সাক্ষী’ নামের ভক্ত তারই উদাহরণ। প্যাটম্যানের জন্য পাগল সাক্ষীরা কখন তাদের আইডলের জীবনে ভয়ংকর শত্রুতে পরিণত হয়, কে বলতে পারে! তেমনই ঘটনা ঘটে ‘লগআউট’-ছবিতেও।
তবে একটা বিষয়ে জোর দিয়ে সিনেমা বানাতে গিয়ে গল্পের অন্যান্য দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়নি। প্রত্যুষের পরিবার, তার ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পর্ক, তার আগের বানানো কনটেন্টগুলোর দিকে একটু দৃষ্টি দিলে সিনেমাটি পূর্ণাঙ্গ হতো। এদিক থেকে কিছুটা আক্ষেপ রয়ে যায়।
এ সময়ের প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবে ‘লগআউট’ সিনেমাটি আলাদা করে নজর কাড়তে বাধ্য। বাড়তি হিসেবে দারুণ সিনেমাটোগ্রাফি আর বাবিল খানের অসাধারণ অভিনয় তো রয়েছেই।