logo

আগামী ৫ বছরের মধ্যে ন্যাটো আক্রমণ করতে পারে রাশিয়া: জোট প্রধানের কঠোর সতর্কবার্তা

ডেইলি স্টার ব্যানার
Published: 12 December, 2025
photo
মার্ক রুট, ন্যাটো সামরিক জোটের প্রধান

ন্যাটো সামরিক জোটের প্রধান এক স্পষ্ট সতর্কবার্তায় বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রাশিয়া ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। খবর বিবিসির।

 

মার্ক রুট জার্মানিতে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেন, "রাশিয়া ইতোমধ্যেই আমাদের বিরুদ্ধে তার গোপন কার্যকলাপ বাড়াচ্ছে। " তিনি আরও বলেন, “আমাদের দাদা বা প্রপিতামহরা যে মাপের যুদ্ধ সহ্য করে এসেছেন, আমাদেরও সেই মাপের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ”

রাশিয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুরূপ বক্তব্যকেই তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন ভাবনাকে 'উন্মাদনা' বলে উড়িয়ে দিয়েছে মস্কো।

 

রুটের এই সতর্কবাণী এমন সময় এল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।

 

চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, তাদের দেশ ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পরিকল্পনা করছে না। তবে ইউরোপ যদি চায়—বা যদি যুদ্ধ শুরু করে—তাহলে রাশিয়া 'এই মুহূর্তেই' প্রস্তুত।

 

কিন্তু ২০২২ সালেও মস্কো এরকম আশ্বস্ত করেছিল, ঠিক তার আগেই প্রায় দুই লাখ রুশ সেনা সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়।

 

পুতিন অভিযোগ করেছেন, ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

ইউক্রেনের কয়েকটি ইউরোপীয় মিত্র যে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ-সমাপ্তির শান্তি পরিকল্পনাটি বদলানোর চেষ্টা করেছে, যার প্রাথমিক খসড়া রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকে ছিল—তারই ইঙ্গিত ছিল এই অভিযোগে।

 

কিন্তু পুতিন আন্তরিক নন, জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ন্যাটোর মহাসচিব এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন,  ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য একটি নিশ্চিত সুরক্ষা।

 

তিনি বলেন, 'ভাবুন তো, যদি পুতিন তার লক্ষ্য অর্জন করে; ইউক্রেন রুশ দখলের বুটের নিচে চলে যাবে, তার বাহিনী ন্যাটোর সঙ্গে আরও বড় সীমান্তজুড়ে অবস্থান নেবে, এবং আমাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে।'

রাশিয়ার অর্থনীতি গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে কার্যত যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক অবস্থায় রয়েছে—দেশটির কারখানাগুলো ক্রমাগত আরও বেশি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও আর্টিলারি শেল উৎপাদন করছে।

 

বিশ্ব অর্থনীতি বিষয়ক কিল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ট্যাংক, ৫৫০টি ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং যান, ১২০টি ল্যানসেট ড্রোন এবং ৫০টিরও বেশি আর্টিলারি গান উৎপাদন করছে।

যুক্তরাজ্য এবং তাদের বেশিরভাগ পশ্চিমা মিত্র দেশ এই সক্ষমতার ধারেকাছেও নেই।

 

বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিম ইউরোপের কারখানাগুলোর রাশিয়ার অস্ত্রের ব্যাপক উৎপাদনের পর্যায়ে পৌঁছাতে আরও বহু বছর সময় লাগবে।

 

এরই মধ্যে ফ্রান্স ও জার্মানি তাদের ১৮ বছর বয়সী যুবকদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সামরিক সেবা ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

 

এ বছর তথাকথিত 'হাইব্রিড' বা 'গ্রে-জোন' যুদ্ধ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—যার মধ্যে রয়েছে এমন ধরনের কর্মকাণ্ড যা সহজেই অস্বীকার করা যায়, যেমন সাইবার হামলা, ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া, এবং ন্যাটো দেশের বিমানবন্দর বা সামরিক ঘাঁটির কাছে ড্রোন পাঠানোর অভিযোগ।

তবে এসব উদ্বেগজনক হলেও, ন্যাটো দেশের ওপর রাশিয়ার সরাসরি সামরিক হামলার ফলে যে সংকট সৃষ্টি হবে—বিশেষ করে যদি এতে ভূমি দখল বা মানুষের মৃত্যু জড়িত থাকে—তার তুলনায় এগুলো অনেক ক্ষুদ্র।

 

ন্যাটোতে ৩০টি ইউরোপীয় দেশ রয়েছে—এ ছাড়া আছে কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র, যা জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক সদস্য।

 

ট্রাম্পের চাপের মুখে জোটের সদস্যরা সামরিক ব্যয় বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে।

 

বার্লিনে রুট সতর্ক করে বলেন, "ন্যাটোর নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আপাতত টিকে থাকতে পারে," তবে সংঘাতটি ইউরোপের "একেবারে পাশেই" এবং তিনি আশঙ্কা করেন "অনেকেই নীরবে আত্মতৃপ্ত, অনেকেই এই জরুরি অবস্থা অনুভব করছেন না, অনেকেই বিশ্বাস করেন যে সময় আমাদের পক্ষেই রয়েছে।"

 

ন্যাটো প্রধান বলেন, "জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় এবং উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে হবে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে আমাদের নিরাপদ রাখতে যা প্রয়োজন, তা থাকতে হবে।"